স্টাফ রিপোর্টার :: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এম এ মুমিত আসুকের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় জুড়ী উপজেলা নাগরিক কমিটির উদ্যোগে জায়ফরনগর ইউনিয়ন জনমিলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
কামিনীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জুয়েল রানার পরিচালনায় অনুষ্টিত সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কিশোর রায় চৌধুরী মনি, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, জাকির আহমদ কালা, আব্দুল লতিফ, ইমরুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখরুল ইসলাম, জায়ফরনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মর্তুজ আলী, যুবলীগ নেতা সাইফুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক বেলাল হোসাইন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাহাব উদ্দিন সামছু, সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজ শরীফ রাজু, উপজেলা বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সভাপতি খায়রুল ইসলাম, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাপস দাস, উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি অরূপ দাস প্রমূখ।
জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর নিবাসী, সাবেক পোষ্ট মাষ্টার মরহুম এম এ মুছাওয়ীর এর ২য় পুত্র বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এম এ মুমিত আসুক ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৭ বছর বয়সে ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর শনিবার রাত সোয়া নয়টায় উপজেলার বাছিরপুর চাক্কাটিলাস্থ বাংলাবাড়ীতে ইন্তেকাল করেন। পরদিন বেলা ৩ ঘটিকায় জুড়ী তৈয়বুন্নেছা খানম ডিগ্রি কলেজ মাঠে জুড়ীর সর্বকালের সর্ববৃহৎ জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক গোরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
জীবদ্দশায় আলহাজ্ব এম এ মুমিত আসুক ১৯৬৪ সালে মুজাহিদ বাহিনীতে যোগদেন। ৬৫’র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অংশনেন। ৬৬’র ৬ দফা ও ৬৯ এর গণআন্দোলনে জড়িত হন। এ সময় সামরিক আইন জারীর পর কারাবন্দি হন। কারা মুক্তির পর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন পূর্বক জুড়ী অঞ্চলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ ইংরেজিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ৪নং সেক্টরের রানীবাড়ী সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ ইংরেজি থেকে ২০০৮ ইংরেজি পর্যন্ত একাধারে ১৭ বছর (তির বারের নির্বাচিত) পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৯ ইংরেজিতে নব-গঠিত জুড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ২০১৪ ইংরেজিতে দ্বিতীয়বারের মত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ ইংরেজিতে তাঁর মরহুমা মাতার নামে জুড়ীর সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ তৈয়বুন্নেছা (টি এন) খানম একাডেমি ডিগ্রি কলেজ (বর্তমান সরকারি কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সাথে তাঁর পিতার নামে মুছাওয়ীর হাফিজিয়া মাদ্রাসা, মুছাওয়ীর দাখিল মাদ্রাসা ও এতিম খানা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া উপজেলায় অসংখ্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন সেই সাথে ঝরে পড়া রোধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। তাঁরই একান্ত প্রচেষ্টায় জুড়ীতে এস.এস.সি, এইচ.এস.সি ও ডিগ্রি পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপন হয়। ২০০৪ ইংরেজিতে জুড়ী উপজেলা গঠনে তাঁর ব্যাপক ভূমিকা ছিল। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখায় তিনি ২০১১ ইংরেজিতে বাংলাদেশের শ্রেষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে জাতীয় পদক লাভ করেন। পাশাপাশি জুড়ী উপজেলার হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট সহ সার্বিক উন্নয়নে তাঁর ব্যাপক অবদান রয়েছে। মহালদারী (কাঠ-বাঁশ) ব্যবসা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন ব্যবসায় ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেন।
বার্তা সম্পাদক / হাকালুকি