নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের পূর্ব বটুলী (ঠাকুর বাড়ী) নিবাসী শাহ নিমাত্রা এস এফ ডিগ্রী কলেজের ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্রী দিপক রঞ্জন চৌধুরীর মেয়ে অদিতি চৌধুরী (তমা) ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ভোর ৬ ঘটিকার সময় ঢাকা গ্রীন লাইফ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এ ঘটনায় শাহ নিমাত্রা এসএফ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র শিক্ষকদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
সামাজিক মাধ্যমে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন ছাত্র ও শিক্ষকবৃন্দ।
এক আবেগঘন ফেসবুক বার্তায় কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ জহির উদ্দিন লিখেছেন–
অবশেষে আমাদের অদিতিকে হারালাম। অদিতি আমাদের শাহনিমাত্রা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলো। অল্প কিছু দিন আগে তার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমরা তার পাশে পুরোদমে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই সে আজ পরপারে চিরতরে পাড়ি জমালো। তার এই অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাভিভূত। তার কষ্টের কান্না আর ব্যাথাটুকু বুকে চেপেই আমরা এ শিক্ষা বর্ষটি পাড়ি দেব। আমরা সবাই প্রতিদিন তার খবর নিচ্ছিলাম এবং পূর্ব নির্ধারিত হিসেবে আজ ৬ই অক্টোবর সকাল দশটায় তার জন্য আমরা শিক্ষক ও কলেজর স্টাফবৃন্দ এক সভায় মিলিত হই। সভা শুরু করতে না করতেই তার দূঃসংবাদটি আমাদের কানে এসে পৌঁছে। আমরা হতাশার বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ি। আমরা ভাবতেও পারি নি যে এত কম সময়ের মধ্যেই সে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবে। অদিতিকে আমরা বাঁচাতে পারি নি। এই বেদনাটুকু আমরা বহন করে যাবো । গত রাত্রে ঢাকার গ্রীনলাইফ হসপিটালে তাকে প্রথম ক্যামো থেরাপি দেওয়া হয় আর ভোর ৬টায় সে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেলো। সমব্যথি হওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার থাকলো না। আমরা মধ্যবিত্ত অনেকটাই দূর্ভাগ্যবান, হতভাগা। দারিদ্র্যের কষাঘাতে যেখানে আমরা সাধারণ মানুষেরা জর্জরিত। আমাদের আশেপাশে বাঁচার নিরাপত্তাটুকু নেই। আমাদেরকে যেতে হয় অনেকটা অচেনা ঐ ঢাকা শহরে। আর সেখানে যাওয়ার পথখরচ যেখানে আমাদেরকে জমাতে হয়। তাই প্রকৃতপক্ষে চিকিৎসা পাওয়া কত কঠিন আমাদের মতো মানুষের জন্য। হাল গরুবাছুর সব বিক্রি করে প্রস্তুতি নিতে নিতেই জীবনটা বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তগুলো আগত হয়। অদিতিকেও এই একই চক্রাকারে আজ হারিয়ে যেতে হলো অচেনা পথে । আমরা কেবল উন্নয়নশীল দেশের সিড়িতে পা রেখেছি। অন্যদিকে দূর্নীতি আমাদেরকে গ্রাস করছে যুগের পর যুগ ধরে। তাই কবে আমাদের সাধারণ মানুষের মৌলিক নিরাপত্তার অধিকারটুকু তৈরী হবে কে জানে। এসব অসহায়ত্বের কাছে আমরা পরাজিত ও পরাধীন। কাজেই অদিতির জন্য আমরা কেবলই অসহায় আর সমবেদনায় ব্যথিত হওয়া ছাড়া আর তেমন কিছুই করতে পারি নি । অদিতি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিও।”
হাকালুকি/সম্পাদক