মোঃ চপল সরদার::
ক্ষমতা, প্রতিপত্তি আর প্রশাসনের জোরে উত্তরাতে মোস্তফা জামানগং-এর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৩৬ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে রূপায়ন গ্রুপ। গড়ে তুলেছে রূপায়ন সিটি। রূপায়ন আজ গ্রুপ কোম্পানি হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও এদের প্রথম ব্যবসা ছিলো এ্যাড ও বিলবোর্ডের। সেখান থেকে আজ রূপায়ন গ্রুপে পরিনত হয়েছে। ইতোমধ্যে রূপায়ন গ্রুপ দখলদার ও ভূমিদস্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সূত্রমতে জানাযায়, একসময় রাস্তায় মোড়ে মোড়ে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড লেখা থাকতো রূপায়ন এ্যাড। বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্যের এ্যাড প্রচার করাই ছিলো এক সময়ের রূপায়ন এ্যাড কোম্পানি যা বর্তমানে রূপায়ন গ্রুপ নামে সমধিক পরিচিত। কথাটা নব্বই দশকের শেষের কথা। রূপায়ণ এ্যাড একসময় ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের দিকে ধাবিত হয় পরবর্তীতে রূপায়ন হাউজিংসহ বহুবিধ কোম্পানি মালিক আজকের রূপায়ন গ্রুপের। এছাড়াও মিডিয়াতে রেয়েছে তাদের অধিপত্য, দৈনিক দেশ রূপান্তর, এশিয়ান টেলিভিশন ও দেশ রেডিও নামক মিডিয়া হাউস। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এসব মিডিয়া ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে দৈনিক দেশ রূপান্তর শীর্ষ পত্রিকায় স্থান করে নিয়েছে। সূত্রমতে রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলের সাথে সম্পর্ক ছিলো সদ্য পদত্যাগকৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে,বলতে গেলে আওয়ামী পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠজন। এমন কি বিভিন্ন সময় লিয়াকত আলী খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশে সফরের সঙ্গীও হয়েছেন। এসুবাদে ক্ষমতা,প্রভাব- প্রতিপত্তি দেখিয়ে জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে বিঘার পর বিঘা জমি। যেখানে গড়ে তুলেছেন রূপায়নের বিভিন্ন সিটি কিংবা রিয়েল স্ট্রেটস। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে গভীর সখ্যতা থাকায় ভয়েও এতদিন মুখ খুলতে সাহস পায়নি। সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রক্ষিতে আওয়ামিলীগ সরকারের পতন হয়। চাপের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এজন্য এতদিন সবাই সকল অন্যায় অনাচার সহ্য করলেও আজ যেন দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর পর কথা বলার সাহস পেয়েছে সকলে। গতকাল উত্তরাস্থ রূপায়ন সিটির পার্শে খাল পাড়ে সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদলিপি পেশ করেন। পাশাপাশি এই ভূমিদস্যু ও লুটেরা রূপায়ন গ্রুপের বিচার দাবী করে। প্রতিবাদ লিপিতে মো. মোস্তফা উল্লেখ করেন,
আমি মোঃ মোস্তফা জামান, পিতা-মৃত মোহাম্মদ আলী সাকিন-১৫৯, রানা ভোলা, থানা-তুরাগ, জেলা-ঢাকা। আমি অত্র এলাকায় নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ছিলাম। আমার পিতা মোহাম্মদ আলী সাহেব ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলো। এছাড়াও বংশানুক্রমে এলাকার অনেক জমিজমার মালিক ছিলো।
রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিঃ এরে কর্ণধার লিয়াকত আলী খান . মুকুল ও তাহার ভাই আলী আকবর খান রতন রূপায়ন সিটি উত্তরা নামক একটি হাউজিং প্রকল্প নিয়া অন্যায়ভাবে জোর পূর্বক আমার পরিবারের আমার আত্মীয় স্বজনের ও আমার নিজের নামের খরিদা প্রায় ৩৬ বিঘা সম্পত্তি জোরপূর্বক অন্তর্ভুক্ত করে এবং জোরপুর্বক ক্ষমতার ভয় দেখাইয়া বিনা টাকায় রেজিষ্ট্রি করিয়া নিয়াছে। দখলিকৃত সম্পত্তির মোট মূল্য সাড়ে চার’শ কোটি টাকার অধিক। যাহা নামমাত্র ২,৩৩,০০,০০০/-(দুই কোটি তেত্রিশ লক্ষ) টাকার চেক দিয়া জমি রেজিষ্ট্রি করিয়া নিয়াছে। যা পরবর্তীতে আদালতে মামলা করিয়া টাকা আদায় করেছে।
বিগত ৯/৪/২০১০ইং তারিখে ৩৬৩৫ নম্বর সমঝোতা চুক্তিপত্র সম্পাদিত ও রেজিষ্ট্রি হইয়াছে। উক্ত চুক্তি মোতাবেক সম্পত্তি রেজিস্টি করিয়া না দিয়া চুক্তিভুক্ত সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর চুক্তি করিয়া টাকা গ্রহণ করে। টাকা না দিয়া জুলুমবাজী করিয়া সম্পত্তি প্রজেক্টের অন্তর্ভুক্ত করে।
পরবর্তীতে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিঃ ও আমি সিনিয়র এডভোকেট সরদার নুরুজ্জামান এডভোকেট সুপ্রীম কোর্টের নিকট উভয় পক্ষ কাগজপত্র জমা দিয়েছে। রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিঃ এর আবেদনের আলোকে আরবিট্রেশন কেইস ১/২০১৬ খোলা হয়। উক্ত আরবিট্রেশন আদালতে উভয় পক্ষের কাগজপত্র ও আলোচনা পর্যালোচনায় বিগত ২৮/৫/২০১৮ইং তারিখে রোয়েদাদ প্রদান করেন। উক্ত আরবিট্রেশন আদালতে রূপায়ণের দরখাস্তের প্রেক্ষিতে সম্পত্তির মূল্য মান নির্ধারনের জন্য কমিটি করা হয়। কমিটির মতামতে সম্পত্তির প্রতি কাঠার মূল্য ১,২৬,৫০,০০০/- (এক কোটি ছাব্বিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা নির্ধারন করা হয়। উক্ত সিদ্ধান্ত উভয় পক্ষ মান্যকরার কথা থাকিলেও রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিঃ নিয়ম না মানার কারণে ভুক্তভোগী আরবিট্রেশন ৩৭৩/২০১৮ আনয়ন করে। উক্ত আরবিট্রেশনে জেলা জজ আদালত সম্পত্তির আকার, প্রকার ও পরিবর্ধনে ও বেচাবিক্রি হইতে বিরত থাকার জন্য নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়াছে। কিন্তু রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিঃ নিষেধাজ্ঞা অমাণ্য করে কাজ করতে থাকে। এমর্মে ভায়েলেশন মিস ১২২/২০০৯ আনয়ন করা হয়েছে।
রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিঃ এর আরবিট্রেশন মিস ৩৮৭/২০১৮ আনয়ন করেছে।। উক্ত আরবিট্রেশন মিস কেইস দুইটি শুনানী অন্তে কেইসটি মঞ্জুর হয় এবং রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিঃ এর আনীত কেইস টি ডিসমিস করিয়া রোয়েদাদ বহাল থাকে।
উক্ত রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিঃ মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে আরবিট্রেশন মিস কেইসের আদেশের বিরুদ্ধে আরবিট্রেশন মিস আপীল আনায়ন করে। যাহা শুনানীর অপেক্ষায় আছে।
ভুক্তভোগী মোস্তফা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর ০৫/০৪/২০২২ইং রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিঃ বাদী মূলে বিজ্ঞ জেলা জজ ১ম আদালত, ঢাকাতে ০৫/১৩নং ঘোষণামুলক মোকাদ্দমা দায়ের করেও তর্কিত সম্পত্তির মালিক দাবি করে রাজউক এর নিকট মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন পূর্বক বিগত ১৮/০৫/২০১৫ইং প্রকাশিত গেজেট মুলে ০৮ নং ক্রমিকে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করন বাতিল করনের জন্য এবং তারই ধারাবাহিকতায় অনুমোদিত নির্মান নকশা স্বারক নং রাজউক/নতুন/জোন-২/৩সি- ২-৫০৩/১৫/৫৬৬, স্থা: তাং ২৯/১০/২০১৫ইং বাতিলের আবেদন করে৷
উক্ত রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিঃ আমার ভাইয়ের জমি জয়েন্ট ভেঞ্চার এ ডেপলপমেন্ট করার জন্য নেয়। কিন্তু তার পাওনা অংশ জমির মালিক হিসেবে প্ৰায় ৪২,০০০ হাজার স্কয়ার বর্গফুটের ফ্ল্যাট ২০১৪ সালে বুঝাইয়া দেওয়ার কথা থাকিলেও এখন পর্যন্ত দেয় নাই। আমার ৮.১৮ কাঠা জমি জয়েন্ট ভেঞ্চার দেওয়া হয় বিনিময়ে রূপায়ণ সিটি উত্তরা প্রকল্পের ১নং ফেইজের ১৬নং বিল্ডিং এর ৩য় তলার এ/১, এবং এ/২, ৪র্থ তলার এ/১ এবং এ/২, ও ৫ম তলার এ/১ এর ৫টি ফ্ল্যাট বুঝাইয়া দেয় নাই দেওয়ার তারিখ ছিল ১৭/০১/২০২৩। এরকম বহু মানুষের টাকা নিয়া ফ্ল্যাট বুঝাইয়া না দিয়া নতুন করিয়া টাকা চায় ৷
এখন পরিবর্তনশীল সরকার, ও ন্যায় নিষ্ঠাবান সাংবাদিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকার রিপোর্টার আপনাদের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে নিবেদনে নিজ মালিকানাধীন ২৭৫ শতাংশ সম্পত্তি যাহার তফসিল
জিলা-ঢাকা, থানা তুরাগ মৌজা নলভোগ সি.এস. দাগ নং-৬০০, ৫২১, ৬০৪, ৫৮৬, ৬০১, ৬০২, ৬০৫, ৬০৬, ৬০৯, ৬১৭, ৬১৮, ৬১৯, ৬২৫, ৬২৬, ৬১১ এবং
১৬৮
উক্ত থানার রানা ভোলা মৌজার সি.এস. দাগ নং-১৬৯, ২৪৩, ১৭৯, ১৭১, ও ১৭৩ দাগ সমূহের অন্তরে কমবেশি ২৭৫ শতাংশ যাহা ৯/৪/২০১৩ইং তারিখের সম্পাদন চুক্তিপত্রে ও আরবিট্রেশন কেইসে ২৮/৫/২০১৮ইং তারিখের রোয়েদাদ যাহা জেলা জজ আদালত ও আরবিট্রেশন আদালতে বহাল রয়েছে।
উল্লেখিত সম্পত্তি ফেরত ফেরত পাওয়া কিংবা আরবিট্রেশন আদাতের রোয়েদাদ মূলে কাজ করার জন্য এবং অসহায় গরীব মানুষের ফ্ল্যাট গুলো বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আকুল আবেদন। পাশাপাশি ভূমিদস্যু, লুটেটা ও দখলবাজ রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিঃ এর চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানান।