মোহাম্মদ নূরল হক :
বিদ্যায় নগন্য, এলেম কালামে আরো কম, বলতে পারেন যৎকিঞ্চিত । তাই অনেক আলোচনায় আমায় থাকতে হয়, থাকি, কিন্তু দর্শক হিসেবে । আলোচনা সমালোচনায় আমার ভূমিকা নিরব । আমার এই অবস্থানের সুযোগ বুঝে কেউ কেউ খোঁচা মারেন, যেন খোঁচার খোটায় মুখ ফোটে । কতক্ষন আর চুপ থাকা যায়, তাই যুক্তি হিসেবে বলি, দির্ঘদিন বিচার বিভাগে জজিয়তি পেশায় থাকায় শোনার অভ্যাস বেড়েছে, কথা কম বলাতে স্বস্তি বোধ করি । তবুও শুনতে হয় ।
উনি দানশীল । রহিম সাহেব দয়ার আঁধার । মোহন বাবু দিল দরিয়া কারো কষ্ট সইতে পারে না । সাহায্য করার জন্য ঝাপিয়ে পড়ে । আলহাজ¦ সুজন মিয়া একাধিকবার বড় হজ¦ করেছেন এবং সুযোগ পেলেই ছোট হজ¦-ওমরা করতে ছুটে যান মক্কায় । হযরত মাওলানা চাঁদপুরি অনেক মাদ্রাসার প্রতিষ্টাতা অধ্যক্ষ । মুফতি মোহাম্মদ রেজা হুজুর হাদিস কোরআনে ডাল বরাবর । হুগলির শেখ সাহেব যেখানেই জনদুর্ভোগ, সেখানেই হাজির, অর্থাৎ জনদরদি । মহামহিম মাদার তেরেসা আজীবন করেছেন মানবের সেবা । অন্য আরো অনেকেই আছেন তাদের কেউ কেউ দাবী করেন তার দেল-মন পরিস্কার ফকফকা ।
কদিন আগে এক বন্ধুর বাসায় তার বিদেশ ফেরত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত পাপিয়া ভাবির সাথে কথা হচ্ছিল । তিনি বোরকা নিয়ে প্রসঙ্গ তুলে প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে বলছিলেন যে মুসলিম মহিলার প্রতি এটা একটা জবরদস্তি, স্বাধীনতা হরন । এটা কি সহ্য করা যায় । তার স্বামী দেবতা আমার মুখমন্ডলে চক্ষু বিস্ফারিত আলো প্রক্ষেপন করলেন । দেখে অবাক হলো যে আমি নিরুত্তর । অবশ্য বলে রাখা ভালো পর্দার প্রসঙ্গটি ভাবিই উত্থাপন করেন আমার জ্ঞানগর্ভ জবাব প্রত্যাশা ছিল লক্ষ্য।
বললাম ভাবি বোরখা পর্দার একটি অংশমাত্র । পর্দার অর্থ আমার আপনার ধর্ম ইসলামে ব্যাপক এবং বিস্তৃত । শুধু নারী নয় ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়েই পর্দার আওতাভুক্ত । যেমন কোন পুরুষের চলা ফেরায় দৃষ্টি থাকবে সংযত, লোলুপ নয় । কথাবার্তায় ইত্যাদিতে নারী-পুরুষের পর্দা অভিন্ন । বেফাস বা ফায়েসা কথা পর্দা বিবর্জিত । ভাবী দ্বিমত পোষন করে বললেন সব কিছু দিলের ভিতর, অন্তরে নিবদ্ধ । দেল ভালো তো জগৎ ভালো । শুনে আমাকেই বলতেই হলো, তাহলে ন্যুড ড্যান্স বা ন্যুড পার্কে যাওয়া বা অবস্থান করা কি পরিস্কার দিলের বহি:প্রকাশ ।
ভাবলাম এসব কথায় দাড়ি টানা উচিৎ । কিন্তু যাদের কথা এতক্ষন বলা হলো, তাদে দাবী তারা মৌলবাদী নন বরং প্রগতিশীল । ভাবে প্রকাশ, ইহকালে তারা শান্তির দূত এবং পরকালে তাদের জন্য স্বর্গে দ্বার উন্মুক্ত । শুধুমাত্র প্রবেশের অপেক্ষা ।
স্বর্গ । ইহা পরকালের সাথে সম্পৃক্ত । পরজগতের আবাসস্থল । কে যাবে বা পাবে স্বর্গের টিকেট এ সম্পর্কে ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআনের বহু জায়গায় বহুভাবে পরিস্কার করে বলা আছে । সহজ ভাষায় বলতে গেলে ইহা শুধু মানুষের জন্য ।
মানুষ শব্দটি একবচন হলেও মানুষ বলতে সমস্ত মানুষকে বোঝায় । নারী-পুরুষ, ধনি-গরিব, আমির-ফকির, সর্ব বর্ণ, ধর্ম, গোষ্টি নির্বিশেষে স্বর্গ প্রাপ্তির ধারনা আছে এবং দাবী করা হয় । অবশ্য নাস্তিক ব্যাতিত, স্বর্গ-নরকে তাদের কোন আগ্রহ নাই । যাহোক, ইসলাম ধর্ম মতে যে বিধানাবলী বা স্বর্গ প্রাপ্তির যে শর্তসমুহ বিধৃত আছে তার সারমর্ম এখানে উল্লেখ করা যায় । প্রাসঙ্গিক বিধায় বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে ইসলামিক বিধি বিধানের মূল উৎস কোরআন । এর পরে আছে হাদিস, ইজমা, কিয়াস ইত্যাদি ।
আল কোরআনের ১০৩ নং সূরা আসরের ০৩ নং আয়াতে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়া বা বেহেস্তে যাওয়ার জন্য চারটি শর্ত পুরণ করতে হবে মর্মে উল্লেখ আছে, তা হলো (১) ঈমান, (২) নেক আমল (৩) সত্যের পথে ডাকা বা থাকা এবং (৪) ধৈর্যশীল হওয়া বা ধৈর্যধারনের উপদেশ দেওয়া ।
উল্লিখিত শর্তসমূহ যথাযথভাবে অর্জন ও প্রতিপালন করলে মানুষ দ্বীন ও দুনিয়ার ক্ষতি থেকে সুরক্ষা পাবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে অর্থাৎ স্বর্গপ্রাপ্তির পথ সুগম হবে ।
বর্নিত শর্তাবলী সম্পর্কে যতটুকু সংক্ষেপে সম্ভব আলোচনা করলে বিষয়টি অনেকের কাছে সহজ এবং বোধগম্য হবে সন্দেহ নাই ।
১) ঈমান : যে চারটি শর্ত বা গুনাবলীর অর্জন করলে মানুষ ক্ষতিমুক্ত অবস্থায় থাকতে পারে তন্মধ্যে প্রথম গুনটি হলো ঈমান । এই শব্দটির অর্থ হচ্ছে স্বীকৃতি দেয়া । আর শরিয়তের পরিভাষায় ঈমানের অর্থ অন্তরে বিশ^াস, মুখে স্বীকার এবং কাজ কর্মে বাস্তবায়ন ।
এখন প্রশ্ন হলো ঈমান আনা বলতে কিসের উপর ঈমান আনা বুঝায় । কুরআন মজীদে এর জবাবে সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ননা করা হয়েছে যে :
ক) প্রথমত : এক আল্লাহকে স্বীকার এবং মানা । কিনÍু নিছক তার অ¯িতত্বকে মেনে নেয়া নয় বরং তাঁকে এমনভাবে মানতে হবে যাতে বুঝা যায় তিনি একমাত্র প্রভু ও ইলাহ । তাঁর সর্বময় কর্তৃত্বে কোন অংশিদার নাই । তিনি একমাত্র হুকুম দাতা ও নিষেধকর্তা । তিনি সবকিছু দেখেন ও শোনেন ।
খ) দি¦তীয়ত : রাসুলকে মানা । হযরত মুহাম্মদ (সা:) শেষ নবী, আল্লাহর নিযুক্ত পথ প্রদর্শক এবং নেতৃত্বদানকারী হিসেসে মানা । তিনি যা শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে দিয়েছেন, সবই সত্য এবং অবশ্যই পালনীয় বলে মেনে নেয়া । সাথে সাথে এটার স্বীকৃতি দেয়া যে আল্লাহপাক যুগে যুগে অনেক রাসুল ও নবী পাঠিয়েছেন তন্মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষ নবী ও রাসুল । তাঁর পরে আর কোন নবী বা রাসুল আসবেন না ।
গ) তৃতীয়ত : ফেরেস্তাদের উপর ঈমান ।
ঘ) চতুর্থত : আল্লাহর কিতাব সমূহের উপর ঈমান । বিশেষ করে পবিত্র কুরআনের উপর ঈমান প্রতিষ্টা করা এবং এই কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়নে সদা সচেষ্ট থাকা ।
ঙ) পঞ্চমত: আখেরাতকে বিশ^াস করা । মৃত্যুর পর মানুষকে জীবিত করা হবে এবং দুনিয়ার কৃতকর্মের জন্য বিচার শেষে পুরস্কার হিসেবে বেহেস্ত এবং আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘনের জন্য নরক বাস নিশ্চিত করা হবে । এই সব কিছুতেই দৃঢ় বিশ^াস থাকতে হবে ।
২) নেক আমল : ঈমানের পরে মানুষকে ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য দ্বিতীয় যে গুনটি থাকা দরকার সেটি হচ্ছে সৎকাজ । কুরআনের পরিভাষায় একে বলা হয় আমাল সালেহা । সমস্ত সৎকাজ এর অন্তর্ভুক্ত । কিন্তু কুরআনের দৃষ্টিতে